বাংলাদেশে কিছু ভালো রিসার্চ ইন্সটিটিউট দরকার—যারা খুবই বেইসিক সোশাল ব্যাপারগুলো সম্পর্কে রিসার্চ করবে। এদেশের মানুষদের খাদ্যাভ্যাস, ঘুমের অভ্যাস, নারী-পুরুষের সম্পর্ক, তাদের পাঠাভ্যাস ইত্যাদি নিয়ে খুবই কম্প্রিহেন্সিভ রিসার্চ হওয়া প্রয়োজন। এদেশের যারা মৌলিক লেখালেখির কাজ করতে চান—তারা খুব ইজিলি স্থানীয় রিসার্চের অপ্রতুলতার দরুন মহা সংকটে পড়েন৷ যথেষ্ট রিসার্চ বেইজড এভিডেন্স শো করা না গেলে একজন লেখকের হাইপোথিসিস কখনোই সত্যিকার অর্থে নলেজ হয়ে উঠতে পারে না৷ অপরদিকে রিসার্চ ব্যাপারটা এতটাই ব্যয়বহুল যে, একজন লেখক ব্যক্তি উদ্যোগে তা পরিচালনা করতেও সক্ষম হন না।

বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে জ্ঞানের বিকাশ ঘটাতে চাইলে প্রয়োজন অনেক স্থানীয়-প্রাতিষ্ঠানিক রিসার্চ। একে তো আমাদের ভালো রিসার্চ বেইজড ইন্সটিটিউশন গড়ে ওঠেনি; অপরদিকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর রিসার্চও শুধুমাত্র প্রমোশনের প্রয়োজননির্ভর। এদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের রিসার্চগুলো হার্ডলি কোনো প্র্যাক্টিক্যাল লিটারেচার ডেভেলপমেন্টে অবদান রাখতে পারে।
একটা বই ট্রান্সলেশনের কাজ করতে গিয়ে বারবার উপলব্ধি হচ্ছে—পশ্চিমারা কেন আমাদের থেকে সবদিক দিয়ে এতটা উন্নত! প্রশ্ন হলো—তারা কেন উন্নত হবে না?
ইউনিভার্সিটিতে যখন মার্কেটিংয়ের বইগুলো পড়তাম—সেখানে কেইস স্টাডি হিসেবে আমেরিকান মার্কেটের কেইস স্টাডি পড়ানো হতো! অথচ এটা তো সত্য—আমেরিকান মার্কেট ফিট আর আমাদের দেশীয় মার্কেট ফিটে ভিন্নতা আছে। অন্যদিকে ভারতীয় ভার্সিটিগুলোতে ফিলিপ কটলারদের বই পড়ালেও—সেসব বইয়ের ভারতীয় সংস্করণ পড়ানো হয়, অর্থাৎ ভারতীয় মার্কেট ফিট অনুযায়ী স্থানীয় রিসার্চের ওপরে ভর করে বইগুলোতে বিভিন্ন কেইস স্টাডি সাজানো হয়। অথচ এদেশে আমরা না পেলাম স্থানীয় মৌলিক বই, আর না পেলাম পশ্চিমের বইগুলোর বাংলাদেশ সংস্করণ।
একমাত্র পিওর সায়েন্সেস ছাড়া প্রত্যেক সোশাল সায়েন্সই সাব্জেক্টিভ, ডেমোগ্রাফি ও কালচারের ওপর ডিপেন্ডেন্ড। সোশাল সায়েন্সের ফিল্ডগুলোতে স্থানীয় রিসার্চ ছাড়া আমরা কখনোই আমাদের জন্য সর্বাধিক কার্যকরী জ্ঞান উৎপাদন করতে পারব না। পশ্চিমা মূল্যবোধ ও কালচারে বায়াসড ওয়েস্টার্ন একাডেমিয়াকে যদি কোনো প্রকার স্থানীয়করণ ছাড়াই বিভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের ওপরে চাপানো হয়, তবে তা নিশ্চিতভাবে ওই সংস্কৃতির শিক্ষিত মানুষদের মনস্তত্ত্বে কেওস সৃষ্টি করবে। আর এই কেওসই বর্তমানে আমরা পুরো পৃথিবীর একচেটিয়া একাডেমিক সংস্কৃতিতে দেখতে পাচ্ছি।
মোদ্দাকথা হলো, সোশাল সায়েন্সের ফিল্ডগুলোতে আমাদের প্রচুর স্থানীয় রিসার্চের ওপরে জোর দিতে হবে। এর জন্য গড়ে তুলতে হবে প্রচুর রিসার্চ ইন্সটিটিউট, আর সেসব রিসার্চকে ফান্ডিং করার জন্য গড়ে তুলতে হবে প্রচুর দাতব্য সংস্থা। তা হলেই আমরা সত্যিকার অর্থে একাডেমিয়ার সুফল ভোগ করতে পারব, নচেৎ এই একাডেমিয়া থেকে তৈরি হবে কিছু বাদামি বর্ণের ফিরিঙ্গি, যারা দৈহিকভাবে স্থানীয় হলেও মানসিকভাবে হবে পশ্চিমা চিন্তক। কলোনিয়াল পিরিয়ডে ঠিক এমনটাই ঘটেছিল একাডেমিয়ার ‘ব্রেইন-ওয়াশিং মেশিন’ থেকে তৈরি হওয়া কতিপয় স্বদেশী মডার্নিস্ট আর সেক্যুলারদের ক্ষেত্রে।