পুঁজিবাদের নারী-পণ্যায়ন

পশ্চিমের সরকারগুলো নিজেদের নারীবান্ধব সরকার বলে মনে করে, অথচ তারা পুঁজিবাদের নারী-পণ্যায়নের ব্যাপারে কোনো কথা বলে না, আলাপ তোলে না। তারা পর্ণোগ্রাফির মতো অশ্লীল, অমানবিক, নারীদের পণ্যায়নের প্রধান হাতিয়ার, পুরুষতান্ত্রিক এই ইন্ডাস্ট্রিকে বহাল তবিয়তে চালু রেখেছে। কারণ এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে তারা বিশাল অংকের ট্যাক্স অর্জন করতে পারে। আর এই ইন্ডাস্ট্রি থেকে নারীদের এই ভ্রম হয় যে তার শরীর তারই নিয়ন্ত্রণে আছে, সে নিজের ইচ্ছাতেই নিজের শরীরকে স্বজ্ঞানে ‘ইউজড’ হতে দিচ্ছে। এই যে ভ্রম, এটা নিছকই পশ্চিমের নারীমনের ফ্যান্টাসি।

পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি ট্রিলিয়ন ডলারের ইন্ডাস্ট্রি, যেখান থেকে পশ্চিমের সরকারগুলো মিলিয়ন ডলার ট্যাক্স আয় করে। এখানে টাকাটাই অনেক মূখ্য ব্যাপার। এসব ক্ষেত্রে পশ্চিমের সরকারগুলোর নারীবাদের চেতনা ঝিমিয়ে পড়ে। আফটার অল, তাদের কাছে মানি ইজ সেকেন্ড গড। পর্ণ ইন্ডাস্ট্রি ছাড়াও পতিতালয়ের ব্যবসাও পশ্চিমে রমরমা, ইউরোপীয় বিভিন্ন শহরের চোরাগলিতে পতিতাবৃত্তির বিভিন্ন সেন্টার আছে। আমেরিকার লাস ভেগাস নামে একটা পুরো শহরই আছে সব ধরণের নিষিদ্ধ বিনোদনের জন্য। এসকল জায়গায় নারীদের দেহ নিয়ে লিগ্যাল ব্যবসা চলে। 

যারা নারী অধিকারের বুলি আওড়ান, তারা কখনোই এসব পুঁজিবাদী অশ্লীল বৃত্তি থেকে নারীদের মুক্ত করে ভালো কোনো কাজে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় না। আফটারঅল এই পতিতাদের ট্যাক্সেও সরকারি কোষাগার সমৃদ্ধ হয়। এখানে নারী নিজেই স্বাধীন মতে তার জন্য পতিতাবৃত্তির পেশা বেছে নিচ্ছে, ফলে পুরো ব্যাপারটাই উইমেন এম্পাওয়ারমেন্টের অংশ। পশ্চিমের নারী অধিকারবাদীরাও তাই এইসকল পেশা বন্ধের জন্য কোনো আন্দোলন করে না। তারা বরং টপলেস মুভমেন্ট করে, পুরুষ শ্রমিকদের মতো নিজের উর্ধাঙ্গ উন্মুক্ত রাখতে পারার স্বাধীনতা চায়! হায়রে ভ্রান্তি।

যে যেই পোশাকে কমফোর্ট ফিল করে—তাকে সেই পোশাকই পরতে দেওয়া উচিত, এমন ন্যারেটিভ তৈয়ার করে নারী-পুরুষের মাঝে খুব সুচতুর ভাবে যৌন বিশৃঙ্ক্ষলা তৈরি করা হয়েছে। 

আমরা বিশ্বাস করি, আমাদের দেহও আমাদের নিজের নয়, আমাদের শরীর আল্লাহর পক্ষ থেকে আমানত। আমরা যখন তা স্বেচ্ছাচারী হয়ে ব্যবহার করি—তাতে হাক্কুল্লাহর খেয়ানত হয়। ফলে, পশ্চিমের বয়ানে ‘শরীর আমার, সিদ্ধান্তও আমার’, ‘আমার কমফোর্ট অনুযায়ী পোশাক পরবো’—এসব কথাবার্তা একটি মুসলিম প্রধান সমাজে অর্থহীন।

ইসলাম ফিতরাতের ধর্ম। নারী পুরুষের শারীরিক ও মনস্তাত্ত্বিক প্রবণতা অনুযায়ী ইসলামে আল্লাহ পর্দার বিধান দিয়েছেন। পোশাকের ব্যাপারে পুরুষদের কিছু ছাড় থাকলেও নারীদের প্রায় পুরো শরীরই ঢেকে রাখতে হয়। অথচ দেখুন, বর্তমানে পুরুষরা প্রায় সারা শরীরইল সুটেড বুটেড হয়ে ঢেকে রাখে, অথচ নারীদের পোশাককে বিভিন্নভাবে যৌন-উত্তেজক হিসেবে তৈরি করা হচ্ছে খুব সচেতন ভাবেই। হালের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি নারীকে পুঁজিবাদের পণ্যে পরিণত করার অন্যতম হাতিয়ার। এসব ব্যাপারে কেন নারী অধিকারবাদীদের কেউ সমালোচনা করে না, প্রতিবাদ করে না?

নারীবাদ, মানবাধিকার, উদারতাবাদ ইত্যাদি যত যা-ই থাকুক, পশ্চিমে ভোগবাদ আর পুঁজিবাদই দিন শেষে বিজয়ী হয়। যত বেশি ভোগ ততবেশি প্রফিট, আর ততবেশি পুঁজি। পুঁজিবাদী সমাজে মোহিনীয় চিজি ভাষায় কনসেন্ট আদায়ের মাধ্যমে নারীকে পণ্য বানানো হয়, আর সেটাকে নাম দেওয়া হয় উইমেন এম্পাওয়ারমেন্ট।

Share On:

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts:

কোনোমতে পাশ!

আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই এমন যোগ্যতা দিয়েছেন যে—সে কোনোমতে দুনিয়া থেকে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক জোগাড় করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। বেশিরভাগ

Read More »