পলাশী এবং আমরা

যুদ্ধ শেষে বিজয়ীর বেশে মুর্শিদাবাদের রাস্তা ধরে প্রবেশ করছিলেন রবার্ট ক্লাইভ আর তার অনুগত সৈন্যসামান্ত। ক্লাইভের মনে তখন গৌরবের পাশাপাশি মনের কোনে অজানা আতঙ্ক। রাস্তার দু’ধারে কৌতুহলী জনতার ভিড়। এদের প্রত্যেকেই যদি একটা করে ঢিলও ছুড়ে মারতো- তবে ক্লাইভের লোকজন ছাতু হয়ে যাবার কথা। কিন্তু জনতার কোনো প্রতিরোধ ছিলো না সেদিন। তাদের কারো বিস্ফোরিত চোখে ছিলো ভয়, আর কারো চোখে ছিলো সন্দেহ। দিনটি ছিলো ২৩শে জুন। সাল ১৭৫৭। সিরাজউদ্দৌলাকে হত্যা করে পরবর্তীতে তার মৃতদেহকে হাতির পিঠে চড়িয়ে মুর্শিদাবাদের রাস্তায় রাস্তায় ঘোরানো হয় প্রদর্শনীর জন্য। তখনো জনতার কেউ কোনো কথা বলে নি। তাদের কাছে পুরো ব্যাপারটাই ছিলো নিছক ক্ষমতার পালাবদল; এক নবাবের পর আরেক নবাবের আগমন। মুর্শিদাবাদের জনগন তখনো জানতো না- ক্ষমতার লোভ, প্রাসাদ ষড়যন্ত্র আর স্বার্থের দ্বন্দ্বের কাছে ইতোমধ্যেই পরাজিত হয়েছে বাংলার স্বাধীনতা, স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছে আগামী ১৯০ বছরের জন্য।

পলাশীর আম্রকাননে সংঘটিত হওয়া যুদ্ধের পটভূমি রচিত হয়েছিলো অনেকদিন ধরে। মীর জাফরের ক্ষমতার প্রতি অপরিসীম লোভ, জগৎ শেট, রাজ বল্লবদের বিশ্বাস ঘাতকতা, সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা-খালুর বিদ্বেষমূলক মনোভাব- এর সবকিছুই রচনা করেছিলো এক প্রহসনমূলক পাতানো যুদ্ধের পটভূমি। বিশ্বব্যাপী ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এবং নবাব পরিবারের ঘরোয়া অন্তঃকলহের শিকার হয়েছিলো বাংলা তথা সমগ্র ভারতবর্ষের জনগন; বরণ করে নিয়েছিলো ১৯০ বছরের পরাধীনতার শেকল।

স্প্যানিশ এবং পর্তুগীজ কনকিস্তার (Conquest) পরবর্তী সময়ে উপনিবেশবাদের সবচাইতে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো ব্রিটিশ এবং ফরাসিরা। তারা ইতোমধ্যেই পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিলো। উত্তর আমেরিকা, আফ্রিকা এবং এশিয়ায় বানিজ্যিক এবং রাজনৈতিক আধিপত্য প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ব্রিটিশ এবং ফরাসিরা জড়িয়ে পড়েছিলো একাধিক যুদ্ধে।  পৃথিবীর বিভিন্নপ্রান্তের স্বাধীন স্বদেশী রাজ্যগুলোতে শুল্কমুক্ত একচেটিয়া বানিজ্যের অধিকার প্রত্যাশী ব্রিটিশ আর ফরাসি কোম্পানিগুলোর আচরণ ক্রমেই বানিজ্যিক থেকে রাজনৈতিক রূপ পরিগ্রহ করে। তার ফলশ্রুতিতে ভারতবর্ষেও ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বিভিন্ন সময়ে সংঘাত আর স্বার্থের দ্বন্দ্বে লিপ্ত হয়; পলাশীর প্রান্তরেও যার ব্যত্যয় ঘটে নি।     


সিরাজউদ্দৌলার প্রোফাইল:

সিরাজউদ্দৌলা : মির্যা মুহাম্মাদ সিরাজ-উদ-দৌলা

জন্ম : ১৭৩২ সাল, মতান্তরে ১৭৩৩ সাল।

মৃত্যু : ১৭৫৭ সাল (মিরনের নির্দেশে ঘাতক মোহাম্মদি বেগ কর্তৃক হত্যাকান্ডের শিকার হন।)

রাজত্বকাল : ১৭৫৬ থেকে ১৭৫৭ সাল।

সিংহাসনের পূর্বসূরি : নবাব আলিবর্দি খান

সিংহাসনের উত্তরসূরি : মীর জাফর আলি খান

পিতা : জৈনদ্দিন আহমেদ

মাতা : আমেনা বেগম

স্ত্রী : বেগম লুৎফুল্লেসা

কন্যা : উম্মে জোহরা

পলাশীর যুদ্ধের প্রোফাইল:

যুদ্ধমান পক্ষ:

১ম পক্ষ : বাংলা, ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

২য় পক্ষ : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি

১ম পক্ষ :

সিরাজউদ্দৌলা

মোহন লাল (প্রধান সেনাপতি)

মীর মদন (ভ্যানগার্ড)

মীর জাফর (১৫ হাজার অশ্বারোহী এবং ৩০ হাজার পদাতিক সৈন্যদলের প্রধান, বিশ্বাসঘাতক)

খুদা-ইয়ার লুৎফ খান (বিশ্বাসঘাতক)

রায় দুর্লভ (বিশ্বাসঘাতক)

সিনফ্রেঁ (ফরাসি ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রতিনিধি, অস্ত্রাগারের রক্ষক)

২য় পক্ষ :

কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ

মেজর কিলপ্যাট্রিক

মেজর গ্র‍্যান্ট

মেজর আইরি কুট

ক্যাপ্টেন গপ

ক্যাপ্টেন রিচার্ড নক্স

শক্তিমত্তা :

১ম পক্ষ :

প্রাথমিকভাবে ৫০০০০ সৈন্য (তবে তাদের মধ্যে মাত্র ৫০০০ সৈন্য যুদ্ধে অংশ নেয়।) 

৫৩ টি কামান

২য় পক্ষ :

১০০০ ইউরোপীয় সৈন্য

২১০০ বেতনভুক্ত ভারতীয় সৈন্য

৯ টি কামান ( আটটি পাউন্ডার, একটি হাওইটজার)

হতাহত :

১ম পক্ষ :

৫০০ সৈন্য নিহত ও আহত।

২য় পক্ষ :

৭ জন ইউরোপীয় সৈন্য এবং ১৬ জন দেশীয় সৈন্য নিহত, ৫৩ জন সৈন্য আহত।        

প্রাথমিকভাবে ৩৫০০০ পদাতিক সৈন্য ও ১৫০০০ অশ্বারোহীর মধ্যে ৪৫০০০ সৈন্য ছিলো মীর জাফরের অধীনস্থ। অবশিষ্ট ৫০০০ সৈন্য যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলো।

ফলাফল :

একটি পাতানো মেকি যুদ্ধের মাধ্যমে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করা হয়। যুদ্ধস্থলে প্রাণ হারান নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতি মীর মর্দান ও মোহনলাল।


প্রাসাদ ষড়যন্ত্র :

পৃথিবীর ইতিহাসে যেখানেই রাজতন্ত্র ছিলো- তার প্রায় সবখানেই প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের ঘটনা ঘটেছে। বাংলায়ও তার ব্যত্যয় ঘটে নি। নবাব আলিবর্দি খানের অবর্তমানে বাংলা, বিহার, উড়িষ্যার নবাবি অর্জনের দাবীদার ছিলো অনেকে। ১৭৪৬ সালে মারাঠাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যাবার সময় নানা আলিবর্দি খান তাঁর আদরের নাতী সিরাজউদ্দৌলাকে সাথে করে নিয়ে যান। পাটনা বিজয়ের পর আলিবর্দি তাঁর দৌহিত্র সিরাজকে বালক বয়সেই পাটনার শাসনকর্তা নিযুক্ত করেন। সিরাজের বয়স অল্প হওয়াতে আলিবর্দি খান পাটনায় রাজ্য চালাতে জানকীরামকে পাটনার রাজ প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত করেন। এতে সিরাজ ক্ষুব্ধ হন। সিরাজ স্ত্রী লুৎফুন্নেসা এবং কয়েকজন অনুচরকে সাথে নিয়ে পাটনায় হাজির হন, এবং জানকীরামের কাছ থেকে পাটনার শাসনভার দাবী করেন।

জানকীরাম নবাব আলিবর্দির বিনা অনুমতিতে পাটনার শাসনভার সিরাজের কাছে ছেড়ে দিতে অসম্মতি জ্ঞাপন করেন। ফলে সিরাজউদ্দৌলা পাটনার দূর্গ আক্রমণ করে বসে। জানকীরাম দূর্গের দ্বার বন্ধ করে বৃদ্ধ নবাবের কাছে বিস্তারিত তথ্য জানিয়ে দূত প্রেরণ করেন। দূত মারফত খবর পেয়ে আলিবর্দি খান দ্রুত ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছান এবং পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। সেদিনই আলিবর্দি খান দরবারে আদরের দৌহিত্র সিরাজকে পাশে বসিয়ে ঘোষণা দেন-

" আমার পরে সিরাজ-উদ-দৌলাই বাংলা-বিহার-উড়িষ্যার মসনদে আরোহন করবে "

সেসময় সিরাজউদ্দৌলার বয়স মাত্র সতেরো বছর। সিরাজকে সিংহাসনের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করার ঘটনা তাঁর আত্মীয়বর্গের অনেকেই মেনে নিতে পারে নি। অনেকেই তাঁর বিরোধিতা করতে শুরু করেন। এদের মধ্যে ছিলেন আলিবর্দি খানের বড় মেয়ে ঘসেটি বেগম, তার স্বামী নোয়াজেশ মোহাম্মদ এবং তাদের ছেলে শওকত জঙ। মোগলদের নবাবি সনদ লাভের পর শওকত জঙ নবাব সিরাজউদ্দৌলার সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পরাজিত হন এবং নিহত হন।

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আদ্যোপান্ত :

ভারতীয় উপমহাদেশে বানিজ্য করার জন্য ষোড়শ শতাব্দীতে প্রতিষ্ঠিত হয় একটি জয়েন্ট স্টক কোম্পানি, যার সরকারি নাম দেয়া হয়- ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি। ১৬০০ সালের ৩১শে ডিসেম্বর রানী প্রথম এলিজাবেথ এই কোম্পানিকে তখনকার ব্রিটিশ উপনিবেশ ভারতে একচেটিয়া বানিজ্য করার রাজকীয় সনদ প্রদান করেন। পরবর্তীকালে এ কোম্পানিই ভারতের শাসন ক্ষমতা দখল করে। ১৮৫৬ সালে বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত কোম্পানিটি ভারতীয় উপমহাদেশ শাসন করে। 

ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ১৬০৮ সালে মোগল সম্রাট জাহাঙ্গিরের শাসনামলে সুরাটে প্রথম বানিজ্য কুঠি স্থাপনের অনুমতি পায়। পরে অন্যান্য স্থানসহ হুগলিতে বানিজ্য কুঠি স্থাপিত হয়। মোগল সম্রাট শাহ সুজা ১৬৫১ সালে বাৎসরিক মাত্র তিনহাজার টাকার বিনিময়ে কোম্পানিকে বাংলায় শুল্কমুক্ত অবাধ বানিজ্যের অনুমতি প্রদান করেন; যার মাধ্যমে মূলত পলাশীর যুদ্ধের আদিবীজ রোপিত হয়। ১৬৫৮ সালে কোম্পানির একজন প্রতিনিধি হিসেবে জেমস হার্টের ঢাকায় প্রবেশ করার মধ্য দিয়ে বাংলায় ইংরেজদের আগমন শুরু হয়। ১৭১৫ সালে মোগল দরবার থেকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে নিজস্ব মুদ্রা ব্যবহারের অনুমতি প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে ওই মুদ্রা মোগল সাম্রাজ্যেও চালু হয়।

পলাশীর যুদ্ধের পটভূমিকা রচিত হলে কর্নেল রবার্ট ক্লাইভ আলিনগরের (কলকাতা) শাসক মানিক চাঁদের সহায়তায় চন্দননগর দখল করেন। পরে সিরাজউদ্দৌলাকে উৎখাত করার জন্য সিরাজের পরিবারের কয়েকজন ও মীরজাফর, উমিচাঁদ, জগৎ শেট প্রমুখদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন। চুক্তি মতো কাজ হয় এবং নদীয়ায় পলাশীর প্রান্তরে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সাথে সিরাজউদ্দৌলার পাতানো যুদ্ধ হয়। এই মেকি যুদ্ধে সিরাজুদ্দৌলা পরাজিত হন এবং কুচক্রী স্বদেশিদের হাতে ধরা পড়েন এবং নিহত হন। চুক্তি মতো মীর জাফরকে নবাব বানানো হয়। রবার্ট ক্লাইভ নগদ ত্রিশ লক্ষ টাকা ও চব্বিশ পরগনার জায়গিরদারি লাভ করেন। জায়গির থেকে বছরে ক্লাইভের তিন লক্ষ টাকা আয় হতো। ১৮১৩ সালের মধ্যে পুরো বাংলা অঞ্চলটি ধীরেধীরে ইংরেজদের সম্পূর্ণ করায়ত্ব হয়।

বণিক থেকে রাজন :

ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতে এসেছিলো বানিজ্য করার উদ্দেশ্যে। এ দেশের কিছু অসৎ ক্ষমতা লোভী মানুষের চারিত্রিক ও নৈতিক দূর্বলতাকে পুঁজি করে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্রিটিশ রাজের আনুকুল্যে শাসনকর্তা হিসেবে আবির্ভূত হয়। এই ব্যাপারটা ইঙ্গিত করে এক কবি লিখেছিলেন –

“বণিকের মানদণ্ড

পোহালে শর্বরী

দেখা দিলো 

রাজদণ্ড রূপে”

পলাশী, ভিন্নচোখে:

আমরা যখন পলাশীর ইতিহাস পড়ি- মীর জাফর, ঘসেটি বেগম, রায় দুর্লভ, রাজ বল্লম, মিরন কিম্বা উমিচাঁদের মতো বিশ্বাস ঘাতকদের ছায়া আমাদের চোখে ভেসে আসে। কিন্তু একটা জিনিস সহজেই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়- তা হলো তৎকালীন বাংলার জনগণের অসহায়ত্ব এবং নির্লিপ্ততা। কেন সেদিন বাংলার জনগণ তাদের প্রেমিক নবাবের সাহায্যে এগিয়ে আসে নি? কেন মীরজাফর কিম্বা রায় দুর্লভ, উমিচাঁদদের মতো মানুষের জন্ম হয়েছিলো? আমরা কি কখনো ভেবে দেখেছি? পবিত্র কুর’আন ছুয়ে শপথ করার পরেও কেন মীর জাফর ক্ষমতার লোভের কাছে নিজের ঈমানকে বিকিয়ে দিয়েছিলেন- ব্যাপারটা ভেবেছি কখনো? জগৎ শেটের পরিবার নবাব আলিবর্দি খানের পূর্বতন নবাব সফররাজ খানের বিরুদ্ধে আলিবর্দি খানকে ক্ষমতা গ্রহণে সাহায্য করেছিলেন, পরবর্তীতে জগৎ শেট আবার সিরাজউদ্দৌলাকে মসনদ থেকে সরিয়ে ইংরেজদের এবং মীরজাফরকে ক্ষমতা গ্রহণের জন্য উষ্কে দিয়েছিলো। প্রশ্ন জাগে, কেন? কীসের স্বার্থে? 

ইহজাগতিকতা আর ভোগবাদের কাছে নিঃস্ব হয়ে পড়ে সমস্ত নৈতিকতা আর ধর্মীয় মূল্যবোধ। তবুও কি তারা এই দুনিয়াতে চরম পরিণতি ভোগ করে মরে না? ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় সেদিনের ষড়যন্ত্রের নায়কদের চরম পরিনতির কথা। তাহলে শেষমেষ কী লাভ হলো? সবচাইতে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হলে তারা এদেশের সাধারণ মানুষ। দীর্ঘমেয়াদে অত্যাচারী জমিদার প্রথার শিকার হতে হয়েছিলো এদেশের মানুষকে। দুই দুইবার সোনার বাংলায় নেমে এসেছিলো দুর্ভিক্ষ। খেতে না পেয়ে মারা গেছে লাখ লাখ মানুষ।

আজও বাংলায় শোষণ চলে। ক্ষমতার পালা বদল হয়, কিন্তু শোষণ শেষ হয় না। আজও বাংলাদেশে ভোটের আগে রাজনীতিকেরা জনসাধারণের সামনে টুপি পাঞ্জাবী পরে হাজির হয়। এরপর ক্ষমতায় গিয়ে শাসকশ্রেণি আর সাধারণ জনতাকে মনে রাখে না। বাৎসরিক বাজেটের টাকা লুটপাট হয়, ব্যাংকের ভল্ট লুটপাট হয় এমনকি ভোটারদের ব্যালটপেপার পর্যন্ত লুটপাট হয়, কিন্তু কারো যেন কিছু বলার নেই। সবাই যেন দুঃশাসনের কাছে অসহায় এবং নির্লিপ্ত- ঠিক পলাশী পরবর্তী মুর্শিদাবাদের ভীত জনতার মতো। সেদিন যদি বাংলার সাধারণ জনতা রুখে দাঁড়াতো- বাংলার ইতিহাসটা হয়তো অন্যরকম হতো।

শেষ কথা :     

নাগরিক অধিকার প্রাপ্তির জন্য দেশের প্রতি নিজের মালিকানা অনুভব করাটা জরুরী। দেশটা আমাদের। দেশটা কৃষকের, মুটেমজুরের, আমার, আপনার, সবার। সকল অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে আপনাকে আমাকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, প্রতিবাদে সরব হতে হবে। হ্যাঁ, ইংরেজদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়েই এদেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরা রুখে দাঁড়িয়েছিলো। নীল বিদ্রোহ, সিপাহিবিদ্রোহ, তিতুমীরের সংগ্রাম, ফারায়েজি আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলন, চট্টগ্রামে প্রীতিলতা- সূর্যসেনদের সংগ্রাম- এর সবই আমাদের অন্যায় অপশাসনের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর দীক্ষা দেয়। নজরুলের বিদ্রোহী কবিতা আমাদের মুক্তির সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করে। ভাষা আন্দোলন কিম্বা মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাগুলো আমাদের নবদিগন্তের পথ দেখায়, আলোকিত করে।

আমরা একটা স্বাধীন দেশ পেয়েছি। কিন্তু এই স্বাধীনতা আমাদেরই ধরে রাখতে হবে। সেই শোষণ কিম্বা জুলুমের মন্ত্রণা এখনো আমাদের দরজায় বারবার কড়া নাড়ে; ভিন্নরূপে, ভিন্ন আঙ্গিকে। নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য রাজনীতি সচেতন নাগরিক হয়ে ওঠাটা জরুরী। কারণ দেশটা কোনো বিশেষ দল কিম্বা গোষ্ঠীর না। দেশটা আপনার, আমার, সবার। আসুন একজন প্রকৃত নাগরিক হয়ে উঠি। পলাশী হয়তো আমাদের তা-ই শেখায়।

Share On:

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts:

বিজেপি’র রামরাজত্ব ও ভিন্নচোখে কায়েদে আজম

পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা কায়েদে আজম মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহকে নিয়ে একটা সিনেমা তৈরি করা হয়েছে ১৯৯৮ সালে। পুরোটা ইংরেজি ভাষায়। এ যেন

Read More »