পাপের প্রচার

একদিন মরে যাব। তবে এই মৃত্যু কেবল দৈহিক। রোজ হাশরে আমাদের সব ভালোমন্দের ফলাফল দেওয়া হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। চাকচিক্যময় পৃথিবীর দিকে তাকালে এ বিশ্বাস বারবার ভাঙতে চায়। তবু এ বিশ্বাসহীনতার বিক্ষুব্ধ সময়ে নিভুনিভু ঈমানের আলোটুকু জ্বালিয়ে রাখতে আমাদের অবিরাম সংগ্রাম করে যেতে হয়। পাপের সাগরে হাবুডুবু খেতে খেতে কিছুটা ভয় মিশ্রিত আশা নিয়ে আমরা বাঁচার চেষ্টা করি, আন্তরিক তওবায় আল্লাহ হয়তো ক্ষমা করে দেবেন।

আল্লাহর কাছে তো কোনো কিছুই গোপন থাকে না। আল্লাহ আমাদের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সকল ধরনের পাপ সম্পর্কে অবগত। তবু তিনি মাঝেমধ্যে আমাদের অনেক পাপ তাঁর রহমতের চাদরে ঢেকে রাখেন, গোপন রাখেন। নয়তো সমাজে আমাদের মাথা হেট হয়ে যেত। যে অন্যকে নিজের পাপের সাক্ষী বানায়, আল্লাহও তার থেকে তাঁর রহমতের চাদর তুলে নেন।

সাফওয়ান ইবনু মুহরিয আল-মাযিনি রা. থেকে বর্ণিত,

তিনি বলেন, একদিন আমি ইবনু ‘উমার রা.-এর সঙ্গে তার হাত ধরে চলছিলাম। এ সময় এক ব্যক্তি এসে বলল—কিয়ামাতের দিন আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর মুমিন বান্দার একান্তে কথাবার্তা সম্পর্কে আপনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে কী বলতে শুনেছেন? তখন তিনি বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা মুমিন ব্যক্তিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবেন এবং তার ওপর স্বীয় আবরণ দ্বারা তাকে ঢেকে নেবেন। তারপর বলবেন, অমুক পাপের কথা কি তুমি জান? তখন সে বলবে, হ্যাঁ আমার প্রতিপালক! এভাবে তিনি তার কাছ থেকে তার পাপগুলো স্বীকার করিয়ে নেবেন। আর সে মনে করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি পৃথিবীতে তোমার পাপ গোপন করে রেখেছিলাম। আর আজ আমি তা মাফ করে দেবো। তারপর তার নেকের আমলনামা তাকে দেওয়া হবে; কিন্তু কাফির ও মুনাফিকদের সম্পর্কে সাক্ষীরা বলবে—এরাই তাদের প্রতিপালক সম্পর্কে মিথ্যা বলেছিল। সাবধান, জালিমদের ওপর আল্লাহর অভিসম্পাত। (বুখারি পর্ব ৪৬ অধ্যায় ২ হাদীস, ২৪৪১; মুসলিম ৪৯ অধ্যায় ৮ হা: ২৮৬৮)

ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট কি জানেন? অনলাইন দুনিয়ায় আপনার রেখে যাওয়া পদচিহ্ন বা সাক্ষ্যকে বলা হয় ডিজিটাল ফুটপ্রিন্ট। ধরুন, কোনো এক চিত্র নায়িকার ফেসবুক পেইজে কিছু অশালীন কুরুচিপূর্ণ কমেন্ট করে আসলেন কিংবা নিজের ফেসবুক ওয়াল অশ্লীল গালিগালাজে ভরে রাখলেন! একটিবার ভাবুন, আপনি নিজের অজান্তেই অনলাইনে নিজের পাপের সাক্ষ্য রেখে যাচ্ছেন না-তো?

ভাইয়েরা, আখলাক ঈমানের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যে আখলাক হারিয়ে ফেলে, তার থেকে ঈমানের সৌন্দর্য চলে যায়। সে কখনো সত্যের সাক্ষ্য কিংবা শুহাদা-ই আলান-নাস হতে পারে না। একজন মুসলিমের চরিত্র থেকে ইসলামের সৌন্দর্যের পরিবর্তে যদি কুফরের কদর্যতা ফুটে ওঠে—তবে তা বড়ই ভয়ের কথা। কাউকে হেয় করতে গিয়ে, তুচ্ছতাচ্ছিল্য কিম্বা ট্রল করতে গিয়ে আমরা কি নিজেদের অজান্তে নিজেদেরই ক্ষতি করছি না? ভাবা দরকার।

একদিন মরে যাব; কিন্তু দুনিয়ায় আমার রেখে যাওয়া কর্মের ছাপ ঠিকই রয়ে যাবে। কিয়ামাতের দিন আমরা আল্লাহর রহমতের চাদরে আবৃত হওয়ার সুযোগটুকু হারিয়ে ফেলি—এমন যেন না হয়। আল্লাহর আমাদের নিভুনিভু ঈমানকে শক্তিশালী করুন, উত্তম চরিত্রের অধিকারী করুন, মানবজাতির সামনে সত্যের সাক্ষ্য হবার তাওফিক দিন। আমিন। 

Share On:

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts:

man looking up at the sky

মুক্তি

পশ্চিমা সভ্যতা হলো মুক্ত পৃথিবী। এই পৃথিবীতে জীবনকে যাপনের জন্য কোনো নৈতিক সীমানা নাই, তাই সীমালঙ্ঘনেরও কোনো বালাই নাই। পশ্চিম

Read More »

‘ইসলামিক’ নাম দেওয়াই কি সার্থকতা?

নামকরণের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘ইসলামিক’ বানিয়ে রাখা যায় না। হালের ইসলামি ব্যাংক এবং কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এর নজির। দেখুন, ‘ইসলামিক’

Read More »