আল্লাহ প্রত্যেক মানুষকেই এমন যোগ্যতা দিয়েছেন যে—সে কোনোমতে দুনিয়া থেকে আল্লাহ প্রদত্ত রিজিক জোগাড় করে জীবন কাটিয়ে দিতে পারে। বেশিরভাগ মানুষ আসলে তা-ই করে। তারা তার জন্য একটা মধ্যবিত্ত মিডিয়োকার জীবন বেছে নেয়। মানুষ একটু কষ্ট করে আরেকটু বেটার জীবন পেতে চায় না। সে ভাবে—‘এই তো, চলছে তো, চলে যাচ্ছে তো…’
মানুষ ততটুকু চেষ্টা করে, যতটুকু না হলেই নয়; যতটুকু হলে কোনোমতে কাজ চলে যায়। মানুষ অল্প ও কম মানসম্পন্ন রিসোর্স দিয়ে কাজ চালিয়ে নিতে চায়। এর ফলাফল যা আসে, তা-ও মধ্যমমানের বা মিডিয়োকার। স্কুলের প্রায় সবাই-ই পাশ করে যায়, কিন্তু গোল্ডেন এ-প্লাস পায় অল্প কজন৷ আর্টিস্ট অনেকেই হয়, কিন্তু লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি কিম্বা ভিনসেন্ট ভ্যানগগ হতে পারে অল্প কজন। কোটিপতি অনেকেই হয়, কিন্তু ইলন মাস্ক বা জেফ বেজোস হতে পারে অল্প কজন।

যারা মিডিয়োকার চিন্তাভাবনা করে, তাদের একটা সুবিধা হলো—তারা অল্পতেই তুষ্ট থাকতে পারে। কিন্তু যারা প্রতিভাবান ও প্যাশনেট, তারা কখনোই নিজের অর্জন নিয়ে তুষ্ট হতে পারে না; তারা তাদের অতীত অর্জন থেকে ক্রমাগত আরও বেশি বেটার হতে চায়। There’s always scope to improve. তারা আসলে কতটুকু ওপরে উঠতে চায়? তাদের জন্য তো only sky is the limit. এই অদ্ভুত পরিশ্রমী, উদ্যমী আর দৃঢ়প্রতিজ্ঞ মানুষগুলোই একেকজন এক্সট্রা অর্ডিনারি সোনার মানুষে পরিণত হয়। এদের লেজেন্ডারি অর্জন থেকে মানুষ অনুপ্রাণিত হয়।
দুই হাত, দুই পা আর চিন্তা করার মতো একটা মস্তিষ্ক তো আল্লাহ প্রায় প্রত্যেক মানুষকেই দিয়েছেন। তবু কিছু মানুষ কীভাবে অন্যদের ছাড়িয়ে অনেক অনেক উঁচুতে পৌঁছে যায়? এর উত্তর শিব খেরা খুব চমৎকার ভাষায় দিয়েছেন—‘বিজয়ীরা ভিন্ন কিছু করে না, একই কাজ তারা ভিন্নভাবে করে’। আসলে জীবিকার তাগিদে কাজ তো করাই লাগে, কিন্তু আরেকটু এফোর্ট দিয়ে, আরেকটু পরিশ্রম করে, আরেকটু সৃজনশীল উপায়ে যদি সে-একই কাজ করা হয়—তবে ফলাফল আসে আউটস্ট্যান্ডিং।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষার মতো আমাদের জীবনটাও কিন্তু একটা পরীক্ষা। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলাফল যেমন আমাদের পুরো জীবনের অর্জন এবং জীবনমানকে প্রভাবিত করে—তেমনই দুনিয়ার পরীক্ষায় আমাদের পারফর্মেন্সও প্রভাবিত করবে আমাদের পরকালকে। পরকালেও র্যাঙ্ক অনুযায়ী রিওয়ার্ড দেওয়া হবে। সবাই তো আর জান্নাতুল ফিরদাউসে থাকার সুযোগ পাবে না। সবার রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পাশে থাকারও সুযোগ মিলবে না। আমাদের অনেকেই কোনোমতে জান্নাত পেতে চায়, জান্নাতের হাই পজিশনে যাওয়ার ইচ্ছা ও সামর্থ্য খুব কম মুমিনই রাখেন।
আমাদের এখনই ভাবা দরকার, আমরা কি দুনিয়া এবং আখিরাতে মিডিয়োকার হয়েই থাকতে চাই নাকি পেতে চাই উচ্চ মর্যাদা? কোনোমতে ৩৩ পেয়ে পাশ করার জন্য খুব একটা পড়াশোনা করা লাগে না; কিন্তু গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়ার জন্য প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়, আর এই পরিশ্রমের সুফল ভোগ করা যায় জীবনভর!