অনুগল্প – যেভাবে চায়ের কাপটি আমার হলো!

আমি আমার বউকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তার সাথে প্রায়ই মতের অমিল হয়, তবু আমি চুপচাপ থাকি। আমি সচেতনভাবেই ঝগড়া এড়িয়ে যাই। হয়তো ঝগড়া করতে গিয়ে এমন কিছু বলে বসতে পারি—যাতে আমার বউ কষ্ট পাবে; তাই চুপচাপ থাকাকেই অধিক নিরাপদ মনে করে চুপ থাকি।

কিন্তু মাঝেমধ্যে ঝগড়া এড়িয়ে যাওয়াটা বেশ কষ্টকর হয়ে পড়ে। ঝগড়া না করলে বউ মাঝেমধ্যে খুব মাইন্ড করে, ভাবে—তাকে আমি মোটেই ‘পাত্তা’ দিচ্ছি না। তাই তৎক্ষনাৎ কী করা বা বলা উচিত—তা অনেক সময় বুঝে উঠতে পারি না।

একবার আমার বউ খুব চিৎকার চেচামেচি শুরু করে দিলো; ঝগড়া এড়ানোর জন্য আমি গিয়ে চুলায় চা চড়িয়ে দিলাম। আমার চা চড়ানো দেখে বউ খানিকটা দমে গেলো। এরপর মগে করে ‘চা’ খাচ্ছিলাম যখন—বউ দেখি পুরোই চুপ হয়ে গেলো। ব্যাপারটা আমার মনে বেশ কৌতুহল জাগালো। আমি কৌতুহলী মন নিয়ে ব্যাপারটা নিয়ে কিছু এক্সপেরিমেন্ট করতে শুরু করলাম।

…এরপর থেকেই, মাঝেমধ্যে ঝগড়া শুরু হলেই আমি চুলায় চা চড়িয়ে দিই। চা খাই। ব্যাস সবকুচ ঠান্ডা। যদিও আমি ঝগড়া এড়ানোর একটা যথাযথ উপায় পেয়ে গেলাম, কিন্তু ব্যাপারটা কীভাবে এবং কেন কাজ করে—তার রহস্য ঠিক ধরতে পারছিলাম না। 

যথারীতি একদিন ঝগড়া শুরু হলে পর—আমি চা বানিয়ে খেতে শুরু করলাম; কিন্তু আজ বউ আর থামলো না। সে এসে রাগত স্বরে বললো—’এখন আর বউয়ের কথা শুনতে ভালো লাগে না?’, ‘এখন শুধু চা খেতেই ভালো লাগে?’, ‘চায়ের কাপরে আমার সতিন বানাইছো?’ 

চায়ে চুমুক দিতে দিতে অস্ফুট স্বরে আমার মুখ দিয়ে বেরিয়ে এলো—’হায়রে বেডি মানুষ!’ ☕☕

Share On:

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts:

গল্প – জামালের ঈদ

জামালের ভীষণ মন খারাপ। অন্যসময় বাসায় অল্প পরিমাণে হলেও কিছু ফিরনি পায়েশ রান্না হয় ঈদ উপলক্ষে। কিন্তু এবারের ঈদে কোনো

Read More »

গল্প – ঈদ উপহার

সে জানালার পাশে দাঁড়িয়ে বহুদূরে ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। কী জানি কী ভাবনায় বিভোর হয়ে ওঠে তার মন প্রাণ। তার

Read More »

হজের স্বপ্ন পূরণ হলো

আফ্রিকার সবুজ প্রান্তরে, ঘানার ধূসর মাটির কোলে, আল-হাসান আব্দুল্লাহ নামের এক দরিদ্র কৃষক তার দিনাতিপাত করতেন। জীবনের প্রতিটি বাঁকে অভাব

Read More »