ধর্ম ও মডার্নিটি কোন অর্থে বিপরীতমুখী

মডার্নিটি আমাদের নৈতিকতার ধারণাকেই বদলে দিয়েছে। যা ধর্মে ভালো- তাকে মডার্নিটি খারাপ বানিয়েছে, যা ধর্মে খারাপ- তাকে মডার্নিটি ভালো বানিয়েছে। মডার্নিটির সকল মূল্যবোধ দাঁড়িয়ে আছে- ইহজাগতিকতা (সেক্যুলারিজম), ভোগবাদ আর বস্তুবাদের ওপর। 

ধর্ম পুরুষের কাপড় পরাতে কিছুটা ফ্লেক্সিবিলিটি দিয়েছে, আর নারীকে কাপড় দিয়ে পুরো শরীরকে ঢেকে রাখতে বলেছে। আর মডার্নিটি এসে পুরুষকে স্যুটেড, বুটেড বানিয়ে তার পুরো শরীর ঢেকে দিয়েছে, আর নারীর কাপড়কে ছোট করতে করতে প্রায় নগ্ন করে ছেড়েছে।

মডার্নিটি চাইল্ড রোমান্টিসিজমকে পেট্রোনাইজ করেছে, অথচ ধর্ম কর্তৃক উৎসাহিত বালেগ হবার পরপর বিয়ের ব্যাপারটাকে ভিলিফাই করেছে। ধর্ম বিবাহ বহির্ভূত নারী-পুরুষের প্রেমের সম্পর্ককে হারাম করেছে, অথচ মডার্নিটি বিবাহ বহির্ভূত নারী-পুরুষের প্রেমের সম্পর্ককে রোমান্টিসাইজ করেছে। ধর্মে পরকিয়া গুরুতর অপরাধ, মডার্নিটিতে পরকিয়া মডার্ন কর্পোরেট লাইফস্টাইলের অংশ।

ধর্ম অধিক ভোগকে নিরুৎসাহিত করে, মডার্নিটি ভোগবাদকে পেলে পুষে বড় করে। ধর্ম আল্লাহকে বেশিবেশি স্মরণ করার তাগিদ দেয়, মডার্নিটি আল্লাহর স্মরণকে মিউজিক, মুভী, স্পোটস, হ্যাঙআউট ইত্যাদি দিয়ে রিপ্লেস করে দেয়।

ধর্ম মানুষকে সেল্ফলেস হতে শেখায়, মডার্নিটি মানুষকে বানায় আত্মকেন্দ্রিক, সেল্ফিস। ধর্ম মানুষকে হায়া ও লজ্জাবোধ শেখায়, মডার্নিটি মানুষকে সোকল্ড ওপেনমাইন্ডেড এবং বেহায়া বানায়। ধর্মে যা কেবল স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে জায়েয, মডার্নিটিতে তা ১৮+ হলেই জায়েয হয়ে যায়। ধর্ম রিয়া বা প্রদর্শনেচ্ছা থেকে বিরত থাকতে বলে, আর মডার্নিটি শোঅফ করতে শেখায়।

মডার্নিটি সমকামিতাকে দেখেছে সহনশীলতা আর এক্সেপ্টিবিলিটির চোখে, আর পুরুষের বহুবিবাহকে দেখেছে নারীর প্রতি বৈষম্য আর নির্যাতনের দৃষ্টিতে। 

এত এত ‘আপ-সাইড ডাউন’ রিলেশন থাকা সত্ত্বেও কিছুকিছু ইসলাম মানা মানুষ যখন মডার্ন হতে চায়, মডার্নিস্ট হতে চায়- তখন বেশ অবাক হতে হয়, সাথে কষ্টও লাগে। এরা না বোঝে ধর্ম, না বোঝে আধুনিকতা, না বোঝে ইসলাম, না বোঝে তাগুত। এরা শুধু নিজের নফসকে সেটিস্ফাই করতে চায়; কখনো কখনো ধর্মের লেবাস পরিয়ে এ মানুষগুলো নফসের গোলামিকেও জায়েয বানাতে চায়।

ধর্ম ও মডার্নিটির সম্পর্ক অন্টোলজিক্যালি পরস্পর ব্যস্তানুপাতিক। এই হিসাব যারা বোঝে না, তাদের দিয়ে দ্বীনের রিভাইভাল এবং প্রতিষ্ঠা বেশ অসম্ভব একটা ব্যাপার। 

ইয়া আল্লাহ, আমি সহ মুসলিম উম্মাহর প্রত্যেককে তুমি সিরাতুল মুস্তাকীমের ওপরে মৃত্যুবরণের তাওফিক দাও। আমীন।

Share On:

Facebook
Twitter
LinkedIn

Related Posts:

man looking up at the sky

মুক্তি

পশ্চিমা সভ্যতা হলো মুক্ত পৃথিবী। এই পৃথিবীতে জীবনকে যাপনের জন্য কোনো নৈতিক সীমানা নাই, তাই সীমালঙ্ঘনেরও কোনো বালাই নাই। পশ্চিম

Read More »

‘ইসলামিক’ নাম দেওয়াই কি সার্থকতা?

নামকরণের মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠানকে ‘ইসলামিক’ বানিয়ে রাখা যায় না। হালের ইসলামি ব্যাংক এবং কুষ্টিয়া ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় এর নজির। দেখুন, ‘ইসলামিক’

Read More »

পাপের প্রচার

একদিন মরে যাব। তবে এই মৃত্যু কেবল দৈহিক। রোজ হাশরে আমাদের সব ভালোমন্দের ফলাফল দেওয়া হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।

Read More »