একটা ঘটনা বলি, আমি একটা নামকরা মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে ইন্টার্ভিউ দিতে গিয়েছিলাম। সে ইন্টার্ভিউতে একজনের সাথে আমার পরিচয় হয়, যে কিছুদিন আগেও একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিক্ষকতা করতো। স্যালারি বেশ ভালোই পেতো। কিন্তু লকডাউনের পরপরই স্কুল বন্ধ হয়ে যায়, সেই সাথে বন্ধ হয়ে যায় স্কুলের স্যালারিও। লোকটি এখন জীবিকা নির্বাহের জন্য গলির মোড়ে সবজি বিক্রি করে। এটা তো একটা উদাহরণ, এমন পরিণতি ঘটেছে দেশের হাজার-হাজার মানুষের জীবনে।
ক্যারিয়ার নিয়ে আমাদের তরুণদের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। দুশ্চিন্তা হবারই কথা। যেদেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা প্রায় সাতাশ লক্ষ, সেদেশে শিক্ষিত তরুণদের ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশায় ভোগাটা অস্বাভাবিক নয়। COVID 19 সংক্রমণের আগেই এদেশে সর্বমোট কর্মক্ষম বেকার ছিলো প্রায় চার কোটি। করোনার প্রাদুর্ভাবের পর থেকেই অসংখ্য কর্মজীবি তাদের কাজ হারিয়েছে। করোনাকালীন এমন ভুক্তভোগীর সংখ্যা আমাদের কল্পনার অতীত।

রিযক আসলে আল্লাহই নির্ধারণ করেন। রিযক বাড়ানো কমানোর মাধ্যমে আল্লাহ তার বান্দাদের পরীক্ষা করেন। আল্লাহ ধনীদের মাধ্যমে গরীবকে পরীক্ষা করেন, আবার গরীবদের মাধ্যমে ধনীকে পরীক্ষা করেন। আল্লাহ কোটি-কোটি টাকার মালিককে নিমিষেই পথের ফকির বানিয়ে দিতে পারেন, আবার সামান্য দিনমজুরের উপার্জনে দিতে পারেন অপরিমিত বারাকাহ। কতকত ব্যবসায়ী নিয়তির ফেরে দেউলিয়া হয়ে গেছে- এমন নজির তো আছে ভুরিভুরি, আমাদের চারপাশে তাকালেই আমরা এমন বহু উদাহরণ খুঁজে পাবো।
তাই সম্পদ নিয়ে অহংকার করতে নেই। বরং আমাদের সম্পদের জন্য আল্লাহর প্রতি অনবরত শুকরিয়া আদায় করে যেতে হবে, এই সম্পদকে আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগ মনে করে বেশিবেশি দান সাদাকাহ করে যেতে হবে। আর আমাদের যাদের সম্পদ আছে অপ্রতুল, তাদের ধৈর্য ধারণ, বৈধ প্রচেষ্টা, আর বেশিবেশি আল্লাহর কাছে দুয়া করে যাওয়ার বিকল্প নেই। প্রচুর পরিশ্রম করতে হবে। পরিশ্রমীর সম্পদে আল্লাহ বারাকাহ দেন। একটা প্রবাদ আছে- ‘পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি’।
ক্যারিয়ার নিয়ে হতাশ না হয়ে আল্লাহর কাছে বেশিবেশি চাইতে হবে, আর নিজের দক্ষতা বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। আমাদের চাকরিদাতাদের একটা কমন অভিযোগ হলো- তারা দক্ষ লোক খুঁজে পায় না। তাই নিজের কারিগরি দক্ষতা বাড়ানোর বিকল্প নেই। আর আল্লাহর কদর সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকলে আমাদের হতাশ হবার কোনো কারণও নেই।আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’লা সূরা হুদে বলেছেন- ‘আর তোমরা নিজেদের রবের সমীপে ক্ষমাপ্রার্থনা করো। অতঃপর তাঁর দিকেই ফিরে এসো, তিনি তোমাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উৎকৃষ্ট জীবনোপকরণ দান করবেন এবং অনুগ্রহ পাওয়ার যোগ্যকে তাঁর অনুগ্রহ দান করবেন’ (১১:৩)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের শিখিয়েছেন, আমরা যেন যা চাওয়ার তা আল্লাহর কাছে চাই, সামান্য জুতার ফিতাটিও যাতে আল্লাহর কাছেই চাই। কারণ আল্লাহই রিযকের মালিক।